তাওহিদুর রহমান :
নাম আবদুল করিম। বয়স পঞ্চাশোর্ধ। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। স্ত্রী, তিন ছেলে ও বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকেন রাজধানীর রামপুরা আফতাবনগরের আনসার ক্যাম্পের পাশে। সেখানে জহুরুল ইসলাম সিটি আবাসিক এলাকায় তার একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্বাচ্ছন্দে দিন কাটছিল তার, পাশাপাশি ছেলেদের লেখাপড়া করাচ্ছিলেন। করোনা মহামারি শুরুর পরই সব কিছু উলটপালট হয়ে যায়। একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে ‘‘আবাসিক এলাকার ভিতর অস্থায়ী দোকান-পাট’ না রাখার বিষয়ে জহুরুল ইসলাম সিটি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। ফলে উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থেকে সঞ্চিত ৭০ হাজার টাকা দিয়ে লকডাউনের সময়কালে পারিবারিক ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন। বড় ছেলে ছোটখাটো গ্যারেজে কাজ করে নিজের পকেট খরচ চালায়, কিন্তু ছোটো দুই ছেলে লেখাপড়া করে। দীর্ঘ তিন মাস পর সঞ্চিত টাকা প্রায় ফুরিয়ে যায়। কথায় আছে ‘‘বসে খেলে রাজার ভান্ডার ফুরায়’’ ঠিক এমনটাই ঘটল। এ অবস্থায় পারিবারিক খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে গেল। গভীর দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। অনেক ভেবেছিন্তে কোন কিছু না পেয়ে ধার করে একটি রিকসা ক্রয় করে নেমে পড়লেন জীবনযুদ্ধে।
সোমবার চকবাজার থেকে নয়াপল্টনে অফিসে আসার সময় এসব কথা জানালেন আবদুল করিম। তিনি বললেন ‘‘মামা দেশেতো বড়লোকের অভাব নাই এই যে জিকে শামিম, গোল্ডেন মনির ওদেরতো টাকার অভাব নাই হাজার হাজার কোটি টাকা তাদের এবং বহু বাড়ির মালিক তারা। তারাতো চাইলেই পারে তাদের একটা বাড়ি বিক্রি করে এই করোনা মহামারিতে আমাদের মত শত শত অভাবি পরিবারকে সাহায্য করতে’’। তার কথার জবাবে বললাম, মামা সেই মন-মানসিকতা তাদের নেই। তাদের লক্ষ্য হলো ‘‘যত পাই তত চাই’’। লোকটি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সামাজিক, রাজনৈতিক অনেক কথা বলতে লাগলেন। তার কথা শুনে মনে হলো দেশের খবরাখবর নিয়মিত রাখেন। পরিশেষে তার সব কথা শুনে চিন্তা করলাম, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ি থেকে রিকসা চালক হয়ে গেলেন তিনি। সরকারতো অনেক ক্ষেত্রেই ভর্তুকি দেয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতে এদের মত খেটে খাওয়া মানুষের জন্য যেন কেউ নেই।